হজ্জ পালনে ইচ্ছুক কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ছুটি নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং আনুষ্ঠানিক ধাপ। যেহেতু হজ্জের সময়সীমা নির্দিষ্ট এবং এর প্রস্তুতি দীর্ঘ, তাই যথাসময়ে অফিস বা প্রতিষ্ঠানে ছুটির জন্য আবেদন করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অনেকেই ছুটির আবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে অনিশ্চয়তায় থাকেন, ফলে তা গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা হজ্জের জন্য ছুটির আবেদন লেখার সঠিক পদ্ধতি, কার্যকর ফরম্যাট, এবং জমাদানের সময় ও নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
হজ্জ ছুটির ধরন ও সময়কাল
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হজ্জের ছুটি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে।
- সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য সাধারণত ৪০ দিন পর্যন্ত বেতনসহ ছুটি মেলে। বাংলাদেশ সরকারি বিধি অনুযায়ী এই সুবিধা প্রদান করা বাধ্যতামূলক।
- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এই সময়সীমা ১৫ থেকে ৩০ দিন পর্যন্ত হতে পারে, যা সম্পূর্ণভাবে কোম্পানির নীতির উপর নির্ভরশীল।
- শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ দিনের ছুটি মেলে, তবে এটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়ম এবং পরীক্ষার সময়সূচির উপর নির্ভর করে।
যাদের জন্য বেতনসহ ছুটির দিন সংখ্যা অপর্যাপ্ত, তারা বেতনবিহীন ছুটির জন্য আবেদন করতে পারেন। কিছু প্রতিষ্ঠানে আলাদা “হজ্জ লিভ” পলিসি থাকে, বিশেষ করে ইসলামিক ব্যাংক বা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই ধরনের বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়।
মনে রাখতে হবে, হজ্জের জন্য ছুটি নেওয়া একটি বৈধ অধিকার এবং বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২৭ ও ১১৫ এ এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
হজ্জ ছুটির আবেদন লেখার পদ্ধতি
একটি গ্রহণযোগ্য হজ্জ ছুটির আবেদনে কিছু মৌলিক বিষয় অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- প্রথমেই তারিখ,বরাবর ও কতৃপক্ষের ঠিকানা লিখতে হবে।
- আবেদনপত্রের শিরোনামে স্পষ্টভাবে “হজ্জ পালনের জন্য ছুটির আবেদন” উল্লেখ করতে হবে।
- সম্মোধন হিসেবে “মাননীয় প্রধান নির্বাহী”, “প্রিয় স্যার” বা প্রতিষ্ঠান অনুযায়ী উপযুক্ত সম্বোধন ব্যবহার করা উচিত।
- আবেদনের মূল অংশে হজ্জের উদ্দেশ্য স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। ছুটির সঠিক তারিখ হিজরি ও ইংরেজি উভয় পদ্ধতিতে লেখা উত্তম।
- কর্ম বা পড়াশোনার প্ল্যানের ব্যাপকতা বোঝাতে হবে এবং যদি কেউ আপনার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করবেন, তবে তার নাম উল্লেখ করা যেতে পারে।
- আবেদনের শেষ অংশে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং আপনার যোগাযোগের তথ্য দিতে ভুলবেন না।
- প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যেমন হজ্জ ভিসা, টিকিট ইত্যাদি সংযুক্ত করতে হবে।
নমুনা আবেদন পত্র (৩টি ভিন্ন ফরম্যাট)
১. সরকারি চাকুরিজীবীদের জন্য

২০ মে ২০২৫
বরাবর
সচিব, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশ সচিবালয়
ঢাকা-১২৪০
বিষয়: হজ্জ পালনের জন্য ৪০ দিনের ছুটির আবেদন
মহোদয়,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব পদে কর্মরত আছি। ধর্মীয় দায়িত্ব পালনের জন্য আমি ২০২৫ সালের হজ্জ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং……….অনুযায়ী ৪০ দিনের বেতনসহ ছুটির জন্য আবেদন করছি। আমার প্রস্তাবিত ছুটির সময়কাল ১০ জুন ২০২৫ থেকে ২০ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত। আমার অনুপস্থিতিতে সহকারী সচিব জনাব মোঃ কামরুল হাসান আমার দায়িত্ব সাময়িকভাবে পালন করবেন।
সংযুক্তি:
১. হজ্জ ভিসার কপি
২. টিকিটের কপি
৩. পরিচয় পত্রের ফটোকপি
বিনীত নিবেদক,
মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
উপ-সচিব
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
মোবাইল: ০১৮১২৩৪৫৬৭৮
২. প্রাইভেট কোম্পানির জন্য

June 10, 2025
HR Manager
ABC Cement Industries Limited
TSC, Dhaka
Subject: Application for Hajj Leave
Dear Sir,
I am writing to formally request leave for the purpose of performing Hajj this year. As a Senior Executive in the Marketing Department, I understand the importance of proper notice for such extended leave.
I would like to apply for 40 days of leave from June 15, 2025 to July 25, 2025 to fulfill this important religious obligation. During my absence, my colleague Mr. Rakibul Islam has kindly agreed to handle my responsibilities temporarily.
Please find attached the following supporting documents:
- Copy of Hajj visa approval
- Flight itinerary
- Employee ID copy
I have completed all pending assignments and briefed my team regarding ongoing projects. I would be grateful if you could approve this leave request at your earliest convenience.
Thank you for your consideration.
Sincerely,
Md. Sakib Hasan
Senior Executive
Marketing Department
Employee ID: MKT-1257
Mobile: 01912345678
৩. শিক্ষার্থীদের জন্য

১৫ জুন ২০২৫
বরাবর
প্রধান শিক্ষক
মতিঝিল উচ্চ বিদ্যালয়
মতিঝিল, ঢাকা
বিষয়: হজ্জ পালনের জন্য ছুটির আবেদন
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আমি আপনার বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর রোল নম্বর ২৫ এর নিয়মিত ছাত্র। ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ হজ্জ পালনের জন্য আমি আগামী ২০ জুন ২০২৫ থেকে ৩০ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত সৌদি আরব গমন করতে ইচ্ছুক।
অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত অনুরোধ, উক্ত সময়কালে আমাকে ছুটি মঞ্জুর করার জন্য। আমার অনুপস্থিতিতে প্রদত্ত সকল শ্রেণী কার্যক্রম ও পরীক্ষাসমূহ আমি ফিরে এসে পূরণ করার চেষ্টা করব।
সংযুক্তি:
১. হজ্জ ভিসার কপি
২. বিমান টিকিটের কপি
বিনীত নিবেদক,
মোঃ রিয়াদ হোসেন
দশম শ্রেণী
রোল নম্বর ২৫
মোবাইল: ০১৭১২৩৪৫৬৭৮
আবেদন জমাদানের সঠিক পদ্ধতি
হজ্জ ছুটির আবেদন জমা দেওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠান ভেদে বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। অফলাইন পদ্ধতিতে সাধারণত তিন কপি প্রিন্ট করে স্বাক্ষরসহ জমা দিতে হয়।
আবেদন জমা দেওয়ার সময় রিসিপশন নিশ্চিত করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট বিভাগের সীল বা স্বাক্ষর নিয়ে রাখলে পরবর্তীতে কোনো জটিলতা এড়ানো যায়।
অনেক প্রতিষ্ঠান এখন অনলাইন পদ্ধতিতে আবেদন নেয়, সেক্ষেত্রে কোম্পানির এইচআর সফটওয়্যার ব্যবহার করা যায় অথবা স্ক্যান কপি ইমেইল করে পাঠানো যায়। ইমেইলে পাঠানোর ক্ষেত্রে রিড রিসিপ্ট চেক করা উচিত।
আবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা প্রতিষ্ঠান ভেদে ভিন্ন হয়। সরকারি চাকুরিতে সাধারণত কমপক্ষে ৩০ দিন আগে আবেদন করতে হয়।
প্রাইভেট সেক্টরে ১৫ দিন আগে আবেদন করাই যথেষ্ট। শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশের পর আবেদন করা ভালো, যাতে ছুটির সময়সীমা পরীক্ষার সাথে সাংঘর্ষিক না হয়।
আবেদনের সাথে হজ্জ ভিসার কপি, টিকিটের কপি এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসা সনদ সংযুক্ত করা উচিত।
আবেদন প্রতিষ্ঠান প্রত্যাখ্যান করলে করণীয়
যদি কোনো কারণে আপনার হজ্জ ছুটির আবেদন প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ প্রত্যাখ্যান করে, তবে প্রথমেই লিখিতভাবে কারণ জানতে অনুরোধ করুন। প্রতিষ্ঠানের এইচআর ডিপার্টমেন্টে আপিল করা যেতে পারে।
প্রয়োজনে বাংলাদেশের শ্রম আদালতে আবেদন করা যায়, কারণ ধর্মীয় ছুটি প্রদান না করা শ্রম আইন লঙ্ঘনের শামিল। তবে আদালতে যাওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজে দেখা উত্তম।
হজ্জের জন্য ছুটি নেওয়া একটি বৈধ অধিকার এবং বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ২৭ ও ১১৫ এ এই বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।
হজ্জ ছুটি আবেদনের সাধারণ ভুল ও সমাধান
হজ্জ ছুটির আবেদন প্রক্রিয়ায় অনেকেই কিছু সাধারণ ভুল করে থাকেন, যা পরে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রথমত, অনেকেই অস্পষ্ট ভাষায় আবেদন করেন, যেমন শুধু “কিছু দিনের ছুটি চাই” লিখে আবেদন করেন। এটি একেবারেই অনুচিত। বরং আবেদনে স্পষ্টভাবে ছুটির সঠিক তারিখ (হিজরি ও ইংরেজি উভয় পদ্ধতিতে), ছুটির কারণ এবং প্রয়োজনীয় সময়সীমা উল্লেখ করা উচিত। এতে কর্তৃপক্ষের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
দ্বিতীয়ত, অনেক আবেদনকারী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংযুক্ত করতে ভুলে যান। হজ্জ ভিসা, বিমান টিকিট, প্রতিষ্ঠানের পরিচয়পত্রের কপি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দলিল আবেদনের সাথে অবশ্যই সংযুক্ত করতে হবে। এগুলো ছাড়া আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। কিছু প্রতিষ্ঠান চিকিৎসা সনদও চেয়ে থাকে, বিশেষ করে বয়স্ক কর্মীদের ক্ষেত্রে।
তৃতীয় একটি সাধারণ সমস্যা হলো দেরিতে আবেদন জমা দেওয়া। হজ্জ একটি বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং এর জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি প্রয়োজন। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে এক মাস আগে, প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে দুই সপ্তাহ আগে আবেদন জমা দেওয়া উচিত। দেরিতে আবেদন করলে তা প্রক্রিয়াকরণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে এবং ছুটি নাও মিলতে পারে।
এই সাধারণ ভুলগুলো এড়িয়ে গেলে হজ্জ ছুটির আবেদন প্রক্রিয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। মনে রাখবেন, সঠিকভাবে প্রস্তুত হয়ে আবেদন করলে ধর্মীয় এই দায়িত্ব পালন যেমন সহজ হয়, তেমনি প্রতিষ্ঠানের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় থাকে।
উপসংহার
হজ্জের ছুটির আবেদন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়া যা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা উচিত। এই গাইডে প্রদত্ত নমুনা ও নির্দেশনা অনুসরণ করে আপনি সহজেই ছুটি পেতে পারেন। মনে রাখবেন, হজ্জ শুধু একটি ধর্মীয় কর্তব্য নয়, এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মহান সুযোগ।
আপনার হজ্জ যেন কবুল হয় এবং ছুটির প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়, সেই দোয়া রইল। প্রতিষ্ঠানের নিয়ম ও বাংলাদেশের প্রচলিত আইন মেনে চলুন। প্রয়োজনে হজ্জ অফিস (ফোন: ০২-৪১০৬০০১১) থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। অথবা যেকোনো বিষয়ে সহযোগিতা লাগলে হলি মক্কা মদিনা ট্রাভেল সার্ভিসে যোগাযোগ করতে পারেন।