প্রতিটি সক্ষম মুসলমানের জন্য একবার হজ্জ পালন করা ফরজ। এটি ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ । হজ্জ কেবল একটি ধর্মীয় সফর নয় বরং আত্মশুদ্ধি, গুনাহ মোচন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মহান সুযোগ। তবে অনেক হজযাত্রী না বুঝে কিংবা সচেতনতার অভাবে এমন কিছু সাধারণ ভুল করে ফেলেন, যা হজ্জের সৌন্দর্য ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
এখানে এমন ১০টি সাধারণ ভুল তুলে ধরা হলো, যেগুলো জানা থাকলে আপনি আরও সুন্দর ও সহিহভাবে হজ্জ পালন করতে পারবেন।
Table of Contents
Toggle১. হজ্জের নিয়ত ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা
অনেকে হজ্জকে শুধুই ধর্মীয় এক সফর বা সামাজিক রেওয়াজ মনে করেন। অথচ হজ্জের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো আত্মশুদ্ধি, জীবনের পাপমুক্তি এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। এজন্য হজ্জে যাওয়ার আগে আত্মিক প্রস্তুতি নেওয়া এবং ইবাদতের গুরুত্ব উপলব্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
২. ইহরামের নিয়ম না জানা
ইহরাম বাঁধার সময় ভুল নিয়ত করা, মিকাত পার হওয়ার পর ইহরাম বাঁধা, অথবা ইহরামের কাপড় ভুলভাবে পরা—এগুলো সাধারণ ভুল। এ কারণে হজ্জ শুরুর আগেই ইহরামের বিধান ভালোভাবে জেনে নেওয়া জরুরি।
৩. তাওয়াফ ও সাঈ সঠিকভাবে না করা
তাওয়াফ ও সাঈ হজ্জের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অনেকেই সঠিকভাবে ৭ চক্কর সম্পূর্ণ করেন না, বা সাঈ শুরু ও শেষের স্থান (সফা থেকে মারওয়া) ভুল করে ফেলেন। সঠিক নিয়ম না জানলে হজ্জের একটি রোকন বাতিল হয়ে যেতে পারে।
৪. হারাম শরীফে শিষ্টাচার লঙ্ঘন
মক্কা ও মদিনা আল্লাহর কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয় স্থান। সেখানে উচ্চস্বরে কথা বলা, ঝগড়া করা, অন্যকে ধাক্কাধাক্কি করা কিংবা ছবি তোলা—এসব আচরণ অশোভন এবং ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট করে। হজ্জের সময় শান্ত, বিনয়ী ও ইবাদত-কেন্দ্রিক থাকা উচিত।
৫. নির্ধারিত স্থানে ভুলভাবে অবস্থান
আরাফাত, মুজদালিফা এবং মিনায় নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকা হজ্জের অপরিহার্য অংশ। অনেকেই গাইডের নির্দেশনা না মেনে ভুল জায়গায় অবস্থান করেন, যা হজ্জের শুদ্ধতা নষ্ট করতে পারে। তাই প্রতিটি রোকন সঠিকভাবে আদায়ে সচেতন থাকা জরুরি।
৬. রমি বা জামারায় ভুল করা
শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করার সময় অনেকে সঠিক সংখ্যা না জানা, ভুল স্থানে কঙ্কর ছোড়া বা অন্যকে ধাক্কা দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা। রমি জামারা একটি প্রতীকী আমল, যা ধৈর্য ও নিয়ম মেনে পালন করা জরুরি।
৭. অপ্রয়োজনীয় কথা ও সময়ের অপচয়
হজ্জের মতো একটি পবিত্র সফরে অপ্রয়োজনীয় গল্প, হাসি-তামাশা, এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্যস্ততা—এসব সময় ও ইবাদত উভয়কেই ক্ষতিগ্রস্ত করে। হজ্জের প্রতিটি মুহূর্ত আল্লাহর স্মরণে ব্যয় করা উচিত।
৮. দু’আ ও ইবাদতে মনোযোগ না দেওয়া
হজ্জ ইবাদতের মৌসুম, কিন্তু অনেক হজযাত্রী বেশি ব্যস্ত থাকেন ছবি তোলা, কেনাকাটা ও সফরের আনন্দে। এতে মূল ইবাদত থেকে মনযোগ সরে যায় এবং হজ্জের মূল লক্ষ্য ব্যাহত হয়। তাই ইবাদত, তিলাওয়াত ও দোয়ায় মনোনিবেশ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
৯. অন্যকে কষ্ট দেওয়া
হজ্জের সময় সহস্রাধিক মুসলমান একত্রে অবস্থান করেন। অনেকে ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি, নিজে আগে যেতে চাওয়ার প্রবনতা, কিংবা উচ্চস্বরে কথা বলার মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেয়। হজ্জের শিক্ষা হলো ধৈর্য, সহনশীলতা ও সহানুভূতি।
১০. শরীয়ত মোতাবেক হজ্জ সম্পন্ন না করা
অনেকেই হজ্জের কিছু অংশ পালন না করে ফিরে আসেন বা ভুলভাবে আমল করেন, যা হজ্জের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। প্রতিটি রোকন ও ওয়াজিব সঠিকভাবে আদায় করা বাধ্যতামূলক।
শেষ কথা
হজ্জ একটি আত্মিক যাত্রা, যার সফলতা নির্ভর করে আপনার প্রস্তুতি, আন্তরিকতা এবং সচেতনতার উপর। উপরোক্ত ভুলগুলো এড়াতে পারলে আপনার হজ্জ হবে আরও সুন্দর, সহিহ এবং আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার যোগ্য। আল্লাহ যেন আমাদের সবাইকে হজ্জের প্রকৃত রূপ অনুধাবন ও পালন করার তৌফিক দেন, আমিন।